১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস কেন?

১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস কেন?


ভালোবাসা দিবস, যা ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বজুড়ে পালিত হয়, ভালোবাসা ও অনুরাগের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। এই দিনটি তরুণ থেকে শুরু করে প্রায় সকল বয়সের মানুষের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে দিবসটি উদযাপন করা হয় উৎসবমুখর পরিবেশে। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না, কেন এই দিনটিকে ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এর পেছনে রয়েছে এক অনন্য ইতিহাস এবং কিছু সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষঙ্গ।


ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস

ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস অত্যন্ত রক্তাক্ত ও বেদনাদায়ক, যা শুরু হয়েছিল সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগের মাধ্যমে।

২৬৯ খ্রিস্টাব্দে ইতালির রোম নগরীতে বসবাস করতেন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে এক খ্রিস্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক। সেই সময় রোমের সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। পাশাপাশি তিনি বিশ্বাস করতেন, বিয়ে বা প্রেম পুরুষদের যুদ্ধক্ষেত্রে দুর্বল করে তোলে। তাই তার সাম্রাজ্যে সৈন্যদের প্রেম বা বিয়ে নিষিদ্ধ ছিল।

সম্রাটের আদেশ অমান্য করে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন গোপনে সৈন্যদের বিয়ে পড়াতে শুরু করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সম্রাট তাকে গ্রেপ্তার করেন এবং ১৪ ফেব্রুয়ারি ২৬৯ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেন। ভালোবাসা দিবসের মূল প্রেক্ষাপট সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের এই আত্মত্যাগের মাধ্যমেই তৈরি হয়।


ভালোবাসা দিবস উদযাপনের সূচনা

৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে পোপ সেন্ট জেলাসিউ প্রথম এই দিনটিকে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। প্রাচীন রোমে লুপারকেলিয়া উৎসব পালিত হতো, যা ছিল বসন্ত আগমনের প্রতীক। এই উৎসবে তরুণ-তরুণীরা একে অপরের নাম লিখে বাছাই করতেন এবং তাদের সম্পর্ক গড়ে উঠতো। লুপারকেলিয়া উৎসব ও সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগ একসঙ্গে মিলে ভালোবাসা দিবসকে নতুন মাত্রা দেয়।


১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস কেন?

১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটি সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুর দিন হিসেবে বিশেষভাবে স্মরণীয়। তবে এই দিনে ভালোবাসার উদযাপন শুধু তার আত্মত্যাগের কারণে নয়। প্রাচীন রোমান রীতি, খ্রিস্টান ধর্ম এবং মধ্যযুগীয় ইউরোপীয় সংস্কৃতি একত্রিত হয়ে দিনটিকে ভালোবাসা দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।


বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবস

বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবস প্রথম পালন শুরু হয় ১৯৯৩ সালেশফিক রহমান, "যায়যায়দিন" পত্রিকার সম্পাদক, এই দিবসটি উদযাপনের প্রবর্তন করেন। বর্তমানে, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দিনটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস একই দিনে উদযাপন হওয়ায় এই দিনটি আরও রঙিন হয়ে ওঠে।

উদযাপনের ধরণ:
১. ফুলের আদান-প্রদান: প্রেমিক বা প্রেমিকারা একে অপরকে লাল গোলাপ উপহার দেন।
2. শুভেচ্ছা বার্তা: "প্রেমিকাকে ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা" পাঠানোর জন্য এই দিনটিতে অনেকেই মেসেজ বা কার্ড ব্যবহার করেন।
3. উপহার বিনিময়: চকলেট, পারফিউম, টেডি বেয়ার ইত্যাদি উপহার জনপ্রিয়।
4. সামাজিক গণমাধ্যমের ভূমিকা: ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মে ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে ছবি ও বার্তা শেয়ার করা হয়।


ভালোবাসা দিবস উদযাপনের বৈশ্বিক প্রভাব

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভালোবাসা দিবস উদযাপিত হয় কিছু ভিন্নধর্মী রীতিনীতিতে।

  • যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: প্রায় ২.৫ কোটি কার্ড এবং অগণিত ফুল, চকলেট বিক্রি হয়।
  • জাপান: এখানে মেয়েরা ছেলেদের চকলেট উপহার দেয়।
  • ফ্রান্স: ভালোবাসা দিবসকে রোমান্টিক চিঠি ও উপহারের মাধ্যমে উদযাপন করা হয়।
  • পাকিস্তান: ধর্মীয় কারণে ২০১৭ সালে ভালোবাসা দিবস উদযাপন নিষিদ্ধ করা হয়।

ভালোবাসা দিবসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক

১. প্রেম ও সম্পর্কের গুরুত্ব:
ভালোবাসা দিবস শুধুমাত্র প্রেমিক-প্রেমিকার জন্য নয়; এটি পরিবার, বন্ধু এবং সকল প্রিয়জনের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের দিন।

  1. বাণিজ্যিক দিক:
    ভালোবাসা দিবস একটি বাণিজ্যিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। উপহার সামগ্রীর ক্রয়-বিক্রয়ের কারণে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো বড় আকারে লাভবান হয়।

  2. সাংস্কৃতিক মিশ্রণ:
    বাংলাদেশে পাশ্চাত্যের প্রভাব থাকলেও এটি নিজেদের সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে গেছে। বাংলাদেশের বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবস একই দিনে পালিত হওয়ায় উৎসবের মাত্রা আরও বেড়েছে।


ভালোবাসা দিবস উদযাপন: কিছু পরামর্শ

১. পরিকল্পনা করুন আগে থেকে: প্রিয়জনের জন্য উপহার ও বিশেষ আয়োজন আগে থেকে পরিকল্পনা করুন।
2. ফুল উপহার দিন: লাল গোলাপ ভালোবাসার প্রতীক। এটি প্রিয়জনকে উপহার দিন।
3. ভালোবাসা প্রকাশ করুন: "প্রেমিকাকে ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা" জানাতে একটি সুন্দর বার্তা পাঠান।
4. পরিবারকেও সময় দিন: শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার জন্য নয়, পরিবারের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করাও গুরুত্বপূর্ণ।


ভালোবাসা দিবসের সমালোচনা ও বিতর্ক

বাংলাদেশসহ কিছু দেশে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কারণে ভালোবাসা দিবস উদযাপন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

  • ধর্মীয় আপত্তি: ইসলামি শরীয়তে এই দিবসটির কোনো ভিত্তি নেই।
  • পাশ্চাত্য প্রভাব: অনেকেই মনে করেন, এটি পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণ।
  • বাণিজ্যিককরণ: ভালোবাসা দিবসকে ব্যবসায়িক লাভের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বলে সমালোচনা রয়েছে।

শেষ কথা

১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ভালোবাসার এক অনন্য মিশ্রণ। যদিও এটি সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল, আজ এটি প্রেম, অনুরাগ ও মানবিক সম্পর্ক উদযাপনের দিন।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দিনটি পালিত হয় উৎসবমুখর পরিবেশে। যদিও এই দিনটি উদযাপন নিয়ে বিভিন্ন বিতর্ক রয়েছে, তবুও ভালোবাসার গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। ভালোবাসা একটি শক্তি যা মানুষকে একত্রিত করে এবং পৃথিবীকে সুন্দর করে তোলে।

তাই আপনার প্রিয়জনকে একটি সুন্দর বার্তা পাঠান, একটি গোলাপ দিন এবং বলুন: "ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা!"

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url