দেবদাস চক্রবর্তী থেকে শেখ মুজিব: বাস্তবতার রূপকথা

দেবদাস চক্রবর্তী থেকে শেখ মুজিব: বাস্তবতার রূপকথা


১৯৬৯ সালের কথা, যখন পূর্ব পাকিস্তানের একজন নামকরা বাঙালী ভদ্রলোক পশ্চিম জার্মানি ভ্রমণে গিয়েছিলেন। জার্মানদের সম্পর্কে একটি মজার কথা হলো, তারা সবসময় নিজেদের আভিজাত্য ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে। চ্যান্সেলর হিটলারের সময় থেকে এই অভ্যাসটি তাদের মধ্যে রোপিত হয়েছে।

জার্মানিতে রহস্যময় বিজ্ঞাপন এবং কম্পিউটারের দাবি

ভদ্রলোক হঠাৎই রাস্তার পাশে একটি বিশাল সাইনবোর্ড দেখতে পেলেন। সেখানে লেখা ছিল, "অত্যাধুনিক কম্পিউটারে যে-কোন প্রশ্নের সঠিক উত্তর প্রদান করা হয়; ব্যর্থতায় ৫,০০০ ডয়েচ মার্ক প্রদান করা হবে।" এই বিজ্ঞাপনটি দেখে তিনি চমকে গেলেন, কারণ সেই সময়ে আমেরিকার আইবিএম কোম্পানি সবে মাত্র কম্পিউটার নিয়ে গবেষণা করছিল। অথচ জার্মানরা ইতিমধ্যেই এমন সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রেখেছে!

কৌতূহল ও লোভের মিশেলে মজার ঘটনা

ভদ্রলোক নিজেকে আর সামলাতে পারলেন না। ৫,০০০ ডয়েচ মার্কের প্রলোভন তাকে দোকানের ভেতরে নিয়ে গেল। সেখানে ম্যানেজারকে বললেন, "আমার একটি প্রশ্ন আছে। সঠিক উত্তর না দিতে পারলে ৫,০০০ ডয়েচ মার্ক দেবেন তো?" ম্যানেজার আত্মবিশ্বাসের সাথে বললেন, "আমাদের প্রতিষ্ঠান অত্যন্ত সুনামের সাথে ব্যবসা করে যাচ্ছে। আপনি আমাদের উপর ভরসা রাখুন।"

প্রশ্ন এবং উত্তর: কম্পিউটারের চমক

ভদ্রলোক এবার কাগজে তার প্রশ্নটি লিখলেন, "আমার বাবা কবে, কোথায় মারা গেছেন?" কম্পিউটার হিসাব-নিকাশ কষে উত্তর দিলো, "আপনার বাবা ১৯৬৩ সালে হুগলী জেলায় মারা গেছেন।" কিন্তু উত্তরটি শুনে ভদ্রলোক "হো হো হো" করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন এবং ম্যানেজারের কাছে দাবি করলেন, "দিন আমার ৫,০০০ ডয়েচ মার্ক।"

ম্যানেজারের চালাকি ও নতুন প্রশ্ন

ম্যানেজার খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললেন, "স্যার, কোথাও হয়তো একটু ভুল হয়েছে। আপনি কি কাইন্ডলি প্রশ্নটা একটু ভিন্নভাবে করবেন?" ভদ্রলোক বিরক্তি নিয়ে বললেন, "আপনি যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই প্রশ্ন করুন, কিন্তু আমার ৫,০০০ ডয়েচ মার্ক দিন।"

দ্বিতীয় প্রশ্ন ও আশ্চর্যজনক উত্তর

ম্যানেজার এবার কাগজে লিখতে বললেন, "আমার মা’র স্বামী কবে, কোথায় মারা গেছেন?" ভদ্রলোক লিখলেন এবং কম্পিউটার উত্তর দিল, "আপনার মা-র স্বামী এখন টুঙ্গীপাড়ার একটি টং হোটেলে বসে চা-সিঙ্গারা খাচ্ছেন। তিনি মারা যাবেন ১৯৭৪ সালের ৩০শে মার্চ।" ম্যানেজার মুচকি হেসে বললেন, "স্যার, আমাদের কম্পিউটার আজ অবধি কোনো ভুল করেনি।"

মনের হতাশা ও ব্যর্থতার গল্প

পাকিস্তানী বাঙালী ভদ্রলোক মন খারাপ করে ৫,০০০ ডয়েচ মার্ক না পাবার হতাশা নিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে এলেন। এটি নিঃসন্দেহে একটি নির্মল কৌতুক, কিন্তু এর ভেতরে লুকিয়ে আছে গভীর সত্য। বাস্তবের সাথে মিলে গেলে সেটা কেবলই কাকতালীয়।

দেবদাস চক্রবর্তী: একটি অন্যায়ের গল্প

এখন আসি বাস্তবের আরেকটি কাহিনীতে। ১৯২০ সালের কথা। তখনকার কলকাতায় একজন সিভিল কোর্টের উকিল মি. চন্ডিদাস ছিলেন। তার একমাত্র কন্যা গৌরিবালা দাস ছিলেন অপরূপা সুন্দরী। তার সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল মি. অরণ্য কুমার চক্রবর্তীর, যিনি ছিলেন চন্ডিদাসের সহকারী উকিল।

সম্পর্কের পরিণতি ও জন্ম দেবদাসের

এ সম্পর্কের ফলাফল হিসাবে গৌরিবালা গর্ভবতী হন এবং ১৯২০ সালের ১২ ডিসেম্বর একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন, যার নাম রাখা হয় দেবদাস চক্রবর্তী। কিন্তু অরণ্য কুমার চক্রবর্তী এই সম্পর্ক ও সন্তানকে অস্বীকার করেন, যা গৌরিবালা ও তার পরিবারকে ভীষণ বিপদে ফেলে।

সমাজের বিধিনিষেধ এবং নতুন সম্পর্ক

চন্ডিদাস তার সহকারী শেখ লুৎফর রহমানের কাছে গৌরিবালাকে বিয়ে করার অনুরোধ জানান, যিনি বাধ্য হয়ে তাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর গৌরিবালা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নাম নেন ছালেহা বেগম এবং দেবদাসের নাম রাখা হয় শেখ মুজিবুর রহমান

দারোগা ও সাক্ষীদের উপস্থিতিতে এফিডেবিট

এই ঘটনাটি কলকাতা সিভিল কোর্টে এফিডেবিট নং ১১৮ তারিখ ১০/১১/১৯২৩ হিসাবে নিবন্ধিত হয়েছিল। সাক্ষী হিসেবে ছিলেন জনাব আব্দুর রহমান সাফায়াত এবং শ্রী অনিল কুমার।

কাহিনীর শিক্ষা এবং সমাপ্তি

এই দুই গল্পের একটি মজার পার্থক্য হলো, একটির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে প্রযুক্তি, আর অন্যটির পেছনে লুকিয়ে আছে একটি দীর্ঘদিন ধরে গোপন রাখা সত্য। প্রথম গল্পটি আমাদের হাসায়, কিন্তু দ্বিতীয় গল্পটি এমন এক বাস্তবতার কথা বলে যা বছরের পর বছর ধরে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। দেবদাস চক্রবর্তী এবং শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন আমাদের দেখায়, কীভাবে কিছু মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে সত্যকে আড়ালে রেখে দেয়। কিন্তু বাস্তব সত্য কখনোই পুরোপুরি ঢাকা পড়ে না। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url