রজব মাস: দোয়া, ফজিলত ও আমল
রজব মাসের গুরুত্ব
রজব মাস হিজরি সনের সপ্তম মাস এবং এটি ইসলামে একটি বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ সময় হিসেবে গণ্য হয়। রজব শব্দের অর্থ সম্মান করা, এবং এই মাস ইসলামের চারটি পবিত্র মাসের একটি। রজব মাসের বিশেষত্ব হলো এটি জমাদিউল উখরা ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী মাস এবং এটি রমজানের প্রস্তুতির সূচনা হিসেবে গণ্য হয়।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘বছরে বারোটি মাস আছে, এর মধ্যে চারটি সম্মানিত মাস। তিনটি ধারাবাহিক: জিলকদ, জিলহজ, ও মহররম। আর চতুর্থটি হলো রজব।’ (বুখারি)
রজব মাসের দোয়া
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজব মাস শুরু হলে এই দোয়া পড়তেন:
اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ، وَشَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রমাদান।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করুন এবং আমাদেরকে রমজান মাস পর্যন্ত পৌঁছার তাওফিক দান করুন।
এই দোয়াটি মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল, যা রমজানের প্রস্তুতিতে সহায়ক। রজব মাসের দোয়া পড়ার ছবি এবং এই দোয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত প্রয়োজন।
রজব মাসের ফজিলত
রজব মাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি ইবাদতের জন্য প্রস্তুতির মাস। রাসুলুল্লাহ (সা.) দুই মাস আগে থেকেই রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, যখন রজব মাস আসত, তখন আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমলের বৃদ্ধি দেখে তা বুঝতে পারতাম।
রজব মাসের ফজিলত সম্পর্কে একটি বিখ্যাত হাদিস রয়েছে: ‘যে ব্যক্তি রজব মাসে (ইবাদত দ্বারা অন্তরের) জমিন চাষাবাদ করল না এবং শাবান মাসে (ইবাদতের মাধ্যমে মনের) জমিন আগাছামুক্ত করল না, সে রমজান মাসে (ইবাদতের) ফসল তুলতে পারবে না।’ (বায়হাকি)
রজব মাসের আমল
রজব মাসে ইবাদতের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এই মাসে মুসলিমদের নফল নামাজ, রোজা এবং দোয়া-ইস্তিগফার বৃদ্ধির প্রতি মনোযোগী হওয়া উচিত। রজব মাসের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে আমরা নিম্নলিখিত বিষয়গুলো আলোচনা করতে পারি:
নফল রোজা রাখা:
রজব মাসে নফল রোজা রাখার ফজিলত অত্যন্ত বেশি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই মাসে সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা পালন করতেন।
মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা পালন করা সুন্নত।
নফল নামাজ পড়া:
তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত-দোহা, আউওয়াবিন নামাজ এই মাসে বিশেষ গুরুত্বের সাথে পড়া উচিত।
হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে জানা যায়, রজব মাসের প্রথম তারিখে ১০ রাকাত নফল নামাজ পড়া সুন্নত।
ইস্তিগফার এবং দোয়া করা:
মাসজুড়ে বেশি বেশি ইস্তিগফার করা এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত।
দান-সদকা:
রজব মাসে দান-সদকা করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। এটি ইবাদতের মূল চেতনা বাড়িয়ে দেয়।
শবে মেরাজ এবং রজব মাস
রজব মাসের অন্যতম প্রধান ঘটনা হলো শবে মেরাজ। এই রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে যান এবং পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজের নির্দেশ পান, যা পরবর্তীতে পাঁচ ওয়াক্তে সীমাবদ্ধ করা হয়।
রমজানের প্রস্তুতি শুরু করার মাস
রজব মাস হলো রমজানের আগমনী বার্তা বহনকারী মাস। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রমজানের প্রস্তুতি শুরু করতে হলে রজব থেকে শুরু করো।’ এই মাসে মনোযোগী হয়ে নফল ইবাদতের চর্চা করা রমজানের ইবাদতের মান বাড়িয়ে দেয়।
উপসংহার
রজব মাসের দোয়া, রজব মাসের ফজিলত, এবং রজব মাসের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রতিটি মুসলিমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই মাসে আল্লাহর কাছ থেকে বরকত ও হেদায়েত প্রার্থনা করা এবং রমজানের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা সুন্নত।
আসুন, আমরা সবাই রজব মাসে বেশি বেশি ইবাদত করি এবং আল্লাহর রহমত লাভের চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রজব, শাবান এবং রমজানের বরকতপূর্ণ সময়গুলোতে ইবাদতে মনোযোগী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।