কোষ বিভাজন কাকে বলে?
কোষ বিভাজন হলো একটি মৌলিক ও অত্যাবশ্যকীয় প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে জীবের দৈহিক বৃদ্ধি, পুনর্গঠন এবং বংশ বৃদ্ধি ঘটে। যে প্রক্রিয়ায় একটি কোষ বিভাজিত হয়ে দুটি বা চারটি নতুন কোষের জন্ম হয়, তাকে কোষ বিভাজন বলে। কোষ বিভাজন সাধারণত বৃহত্তর কোষ চক্রের অংশ হিসেবে ঘটে। বিভাজনের ফলে সৃষ্ট নতুন কোষকে অপত্য কোষ (Daughter Cell) এবং যে কোষটি বিভাজিত হয় তাকে মাতৃ কোষ (Mother Cell) বলা হয়।
কোষ বিভাজনের প্রকারভেদ
সুকেন্দ্রিক জীবে দুই ধরনের কোষ বিভাজন দেখা যায়:
মাইটোসিস কোষ বিভাজন (Mitosis):
বংশানুগতভাবে অপত্য কোষ এবং মাতৃকোষ অভিন্ন।
দেহের বৃদ্ধি ও পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ।
মিয়োসিস কোষ বিভাজন (Meiosis):
ক্রোমোজোম সংখ্যা অর্ধেক কমে যায় এবং হ্যাপ্লয়েড গ্যামেট উৎপন্ন হয়।
যৌন জননে গুরুত্বপূর্ণ।
অ্যামাইটোসিস কোষ বিভাজন (Amitosis): সরাসরি এবং সরল পদ্ধতিতে কোষ বিভাজন ঘটে। এটি সাধারণত প্রোক্যারিওটিক জীব, যেমন ব্যাকটেরিয়া এবং নীলাভ সবুজ শৈবালে দেখা যায়।
মাইটোসিস কোষ বিভাজন কাকে বলে
মাইটোসিস হলো এমন একটি কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া, যেখানে মাতৃকোষের প্রতিটি ক্রোমোজোমের অনুলিপি অপত্য কোষে প্রায় হুবহু বজায় থাকে। এটি দেহকোষে ঘটে এবং জীবের দৈহিক বৃদ্ধি, ক্ষত পুনর্গঠন এবং টিস্যু পুনর্নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মাইটোসিসের ধাপ
মাইটোসিস কোষ বিভাজন পাঁচটি ধাপে বিভক্ত:
প্রোফেজ (Prophase):
ক্রোমোজোম সংকুচিত হয়।
নিউক্লিয়ার মেমব্রেন বিলুপ্ত হয়।
স্পিন্ডল তন্তু গঠিত হয়।
প্রো-মেটাফেজ (Pro-metaphase):
ক্রোমোজোম বিষুবীয় অঞ্চলে অবস্থান করে।
ক্রোমোজোম এবং স্পিন্ডল তন্তুর সংযুক্তি ঘটে।
মেটাফেজ (Metaphase):
সমস্ত ক্রোমোজোম বিষুবীয় অঞ্চলে সারিবদ্ধ হয়।
অ্যানাফেজ (Anaphase):
সেন্ট্রোমিয়ার বিভাজিত হয়।
অপত্য ক্রোমোজোম মেরুর দিকে সরে যায়।
টেলোফেজ (Telophase):
ক্রোমোজোম লম্বা হয়ে নিউক্লিয়ার রেটিকুলামে রূপান্তরিত হয়।
দুটি নতুন নিউক্লিয়াস গঠিত হয়।
মাইটোসিসের গুরুত্ব
দেহকোষ বৃদ্ধি ও ক্ষত পূরণে সাহায্য করে।
অঙ্গজ প্রজনন ও জীবের বৃদ্ধি নিশ্চিত করে।
ক্রোমোজোমের সংখ্যা ও গুণগত বৈশিষ্ট্য একই রাখে।
মিয়োসিস কোষ বিভাজন কাকে বলে
মিয়োসিস হলো এমন একটি কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া, যেখানে মাতৃকোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা অর্ধেক কমে গিয়ে চারটি হ্যাপ্লয়েড অপত্য কোষ উৎপন্ন হয়। এটি প্রধানত জীবের জনন কোষ বা গ্যামেট সৃষ্টির সময় ঘটে।
মিয়োসিসের ধাপ
মিয়োসিস বিভাজন দুটি প্রধান পর্বে বিভক্ত:
১. মিয়োসিস-১:
প্রোফেজ-১ (Prophase-1):
ক্রোমোজোম জোড়ায় জোড়ায় মিলিত হয়।
ক্রসিং ওভার এর মাধ্যমে জিনগত বৈচিত্র্য সৃষ্টি হয়।
মেটাফেজ-১ (Metaphase-1):
ক্রোমোজোম জোড়াগুলি বিষুবীয় অঞ্চলে সাজানো হয়।
অ্যানাফেজ-১ (Anaphase-1):
হোমোলগাস ক্রোমোজোম আলাদা হয়ে মেরুর দিকে সরে যায়।
টেলোফেজ-১ (Telophase-1):
দুটি নিউক্লিয়াস তৈরি হয়।
২. মিয়োসিস-২:
এটি মাইটোসিসের মতো।
অপত্য কোষে ক্রোমোজোম সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকে।
মিয়োসিসের বৈশিষ্ট্য
জিনগত বৈচিত্র্য সৃষ্টি: ক্রসিং ওভারের মাধ্যমে নতুন বৈশিষ্ট্যযুক্ত অপত্য কোষ সৃষ্টি হয়।
ক্রোমোজোম সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসে।
হ্যাপ্লয়েড গ্যামেট উৎপন্ন হয়।
মিয়োসিসের গুরুত্ব
জীবের প্রজননে সহায়ক।
বংশগত বৈচিত্র্য: প্রজাতির বৈচিত্র্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
প্রজাতির বৈশিষ্ট্য টিকে থাকার নিশ্চয়তা দেয়।
অ্যামাইটোসিস কোষ বিভাজন
অ্যামাইটোসিস হলো সরাসরি কোষ বিভাজন, যেখানে কোনো জটিল ধাপ ছাড়াই নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম বিভাজিত হয়। এটি সাধারণত প্রোক্যারিওটিক জীব, যেমন ব্যাকটেরিয়া এবং নীলাভ সবুজ শৈবালে দেখা যায়।
অ্যামাইটোসিসের বৈশিষ্ট্য:
সরাসরি বিভাজন ঘটে।
কোনো বিশেষ ধাপ থাকে না।
প্রোক্যারিওটিক জীব ও কিছু নিম্নশ্রেণীর এককোষী জীবের সংখ্যা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ।
কোষ বিভাজনের গুরুত্ব
কোষ বিভাজন জীবের জন্য অপরিহার্য কারণ এটি:
জীবের বৃদ্ধি ও বংশবৃদ্ধি নিশ্চিত করে।
জীবের ক্ষতস্থানে নতুন কোষ সরবরাহ করে।
জিনগত বৈচিত্র্য সৃষ্টি করে।
প্রজাতির বৈশিষ্ট্য টিকে রাখতে সাহায্য করে।
অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন
অস্বাভাবিক কোষ বিভাজনের ফলে টিউমার এবং ক্যান্সার সৃষ্টি হয়। মাইটোসিস কোষ বিভাজনের নিয়ন্ত্রণ হারালে অস্বাভাবিকভাবে কোষের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এর ফলে টিউমার এবং মারাত্মক ক্যান্সার কোষ সৃষ্টি হয়।
ক্যান্সারের কারণ:
তেজস্ক্রিয়তা।
বিভিন্ন ভাইরাস, যেমন হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV)।
ক্ষতিকর রাসায়নিক।
ব্যাকটেরিয়ায় কোষ বিভাজন
ব্যাকটেরিয়া কোষ বিভাজন সাধারণত বাইনারি ফিশন পদ্ধতিতে ঘটে। এতে:
FtsZ প্রোটিন একটি সংকোচনের রিং তৈরি করে।
ডিভিসোম প্রোটিন কমপ্লেক্স বিভাজনে সহায়তা করে।
উপসংহার
কোষ বিভাজন জীবজগতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং মৌলিক প্রক্রিয়াগুলোর একটি। মাইটোসিস জীবের বৃদ্ধি এবং পুনর্গঠনে সাহায্য করে, যেখানে মিয়োসিস প্রজাতির বৈচিত্র্য ও প্রজননে সহায়ক। এছাড়া অ্যামাইটোসিস প্রোক্যারিওটিক জীবের সংখ্যা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।