ঈদে মিলাদুন্নবী কি এবং ২০২৪ সালে কবে পালিত হবে?

ঈদে মিলাদুন্নবী কি এবং ২০২৪ সালে কবে পালিত হবে?


ঈদে মিলাদুন্নবী মুসলিম বিশ্বের অন্যতম পবিত্র উৎসব। এটি রাসূলুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্মদিন উদযাপন করার দিন। ইসলামী বর্ষপঞ্জির তৃতীয় মাস রবিউল আউয়াল এর ১২ তারিখে এই দিনটি পালিত হয়। এই পবিত্র দিনটি মুসলমানদের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর জন্ম ও মৃত্যুর স্মৃতি বহন করে। বাংলাদেশে ঈদে মিলাদুন্নবীর দিন সাধারণ ছুটি থাকে এবং ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা এই দিনটি বিশেষভাবে উদযাপন করে থাকে।

ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৪ কত তারিখে?

২০২৪ সালে ঈদে মিলাদুন্নবী পালিত হবে ১৬ সেপ্টেম্বর (১২ রবিউল আউয়াল)। এটি সোমবার পড়েছে, এবং বাংলাদেশসহ অনেক দেশে দিনটি উপলক্ষে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক কর্মসূচি পালন করা হবে।

ঈদে মিলাদুন্নবীর ইতিহাস ও উদযাপন

ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনের সূচনা ইসলামের প্রাথমিক যুগে দেখা যায় না। তবে খিলাফতের পরবর্তী সময়ে এবং বিশেষত সুফি আন্দোলনের সময়ে এই উৎসবটি সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করে। মিশরের ফাতিমি শাসকদের আমলে এই উৎসবটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন শুরু হয়। পরবর্তীতে তা বিভিন্ন মুসলিম দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপিত হতে থাকে। তবে অনেক ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, এটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, কারণ কোরআন এবং সুন্নাহতে এই উৎসব পালনের নির্দিষ্ট দলিল পাওয়া যায় না।

ঈদে মিলাদুন্নবীর দলিল: বৈধতা ও বিতর্ক

ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা নিয়ে বিভিন্ন ইসলামি চিন্তাবিদদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। কোরআন ও হাদিসে সরাসরি এই দিন উদযাপনের কোনো প্রমাণ নেই। তবুও অনেক আলেম ও ইসলামী পণ্ডিতেরা বিশ্বাস করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর প্রতি ভালবাসা প্রকাশের জন্য এই দিনটি উদযাপন করা বৈধ। তাদের মতে, ইসলামের মৌলিক শিক্ষা অনুসরণ করে যদি এই দিনটি উদযাপন করা হয়, তবে তা ইসলামের মূলনীতির সাথে সাংঘর্ষিক নয়। অন্যদিকে, সালাফি ও ওয়াহাবি মতাদর্শ এই উৎসবের বিরোধিতা করে এবং একে ‘বিদআত’ হিসেবে চিহ্নিত করে থাকে।

আরও পড়ুন : রিট খারিজ মানে কি? রিট পিটিশনের বিস্তারিত আলোচনা

ঈদে মিলাদুন্নবীর তাৎপর্য

ঈদে মিলাদুন্নবী মুসলমানদের কাছে শুধু একটি উৎসব নয়, বরং এটি নবী মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো এবং তাঁর শিক্ষাকে পুনঃস্মরণ করার একটি মাধ্যম। নবী করীম (সা.)-এর জীবন ছিল ন্যায়বিচার, মানবিকতা, দানশীলতা এবং বিশ্বশান্তির প্রতীক। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর জীবনচরিত প্রতিটি মুসলমানের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ। এই দিনটিতে মুসলমানরা তাঁর জীবনের শিক্ষাগুলো স্মরণ করে এবং তাঁর দেখানো পথে চলার প্রতিজ্ঞা করে।

ঈদে মিলাদুন্নবীর মূল তাৎপর্য হলো নবীর প্রতি ভালবাসা ও সম্মান প্রদর্শন। নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং তাঁর শিক্ষাগুলো তুলে ধরা হয়। এই দিনটি উপলক্ষে মসজিদ ও মাদ্রাসাগুলোতে বিশেষ দোয়া, মিলাদ মাহফিল এবং কোরআন তিলাওয়াতের আয়োজন করা হয়। এছাড়াও, এই দিনটিতে দরিদ্রদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয় এবং দান-খয়রাতের মাধ্যমে রাসূলের (সা.) দেখানো পথে চলার চেষ্টা করা হয়।

ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনের রীতি

ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনের মধ্যে বেশ কিছু সাধারণ আচার-অনুষ্ঠান দেখা যায়। এর মধ্যে রয়েছে:

  • মসজিদ ও বাড়িঘর সজ্জা: মসজিদ ও বাসস্থানগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয় এবং সবুজ পতাকা উড়ানো হয়, যা শান্তি ও ইসলামের প্রতীক।
  • মিলাদ মাহফিল: এই দিনটিতে নবী করিম (সা.)-এর জীবনের ঘটনাগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। বিশেষ করে তাঁর জন্ম ও মৃত্যুদিনের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরা হয়।
  • দরিদ্রদের মধ্যে খাবার বিতরণ: এই দিনটিতে সমাজের গরীব ও দরিদ্র মানুষদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়। এটি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দানশীলতার প্রতীক হিসেবে পালন করা হয়।
  • জুলুস (শোভাযাত্রা): অনেক মুসলিম দেশে জুলুস বা শোভাযাত্রা আয়োজন করা হয়, যেখানে নবীর (সা.) প্রশংসায় নাশিদ আবৃত্তি করা হয়।

আন্তর্জাতিকভাবে ঈদে মিলাদুন্নবীর উদযাপন

বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশে ঈদে মিলাদুন্নবী বিশেষভাবে উদযাপন করা হয়। নিচে কিছু দেশের উদযাপন পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো:

  • পাকিস্তান: পাকিস্তানে এই দিনটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হয়। দিনের শুরুতে রাজধানী ও প্রাদেশিক শহরগুলোতে বন্দুকের স্যালুটের মাধ্যমে উদযাপন শুরু হয়।
  • ইন্দোনেশিয়া: ইন্দোনেশিয়ায় মিলাদুন্নবী উদযাপনের গুরুত্ব এত বেশি যে, এটি কখনও কখনও ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা থেকেও বেশি জাঁকজমকপূর্ণ হয়ে ওঠে।
  • তুরস্ক: তুরস্কে এই দিনটি মেভলিদ কান্দিলি নামে পালিত হয়। তুর্কি কবি সুলেমান চেলেবির লিখিত মওলিদ এই দিনে সবচেয়ে বেশি আবৃত্তি করা হয়।
  • মিশর: মিশরে মিলাদুন্নবীর সময় মশাল মিছিল এবং ভোজ আয়োজন করা হয়।
  • বাংলাদেশ: বাংলাদেশে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিশেষ মোনাজাত ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করে। দেশের বিভিন্ন স্থানে মসজিদ ও মাদ্রাসায় কোরআন তিলাওয়াত, খুতবা ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

মাওলিদ কবিতা এবং এর প্রভাব

মাওলিদ কবিতা হলো নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মের স্মরণে রচিত বিশেষ কবিতা। এটি আনুষ্ঠানিক পাঠ্য হিসেবে আবৃত্তি করা হয়। মাওলিদ উদযাপনে এই ধরনের কবিতা প্রায়শই বিভিন্ন ভাষায় রচিত হয় এবং নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়।

বিশেষত সুফি সম্প্রদায়ে এই ধরনের কবিতা আবৃত্তি করা একটি সাধারণ ঐতিহ্য। এই কবিতাগুলোতে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ভালবাসা ও শ্রদ্ধার প্রকাশ পাওয়া যায়।

উপসংহার: ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করার মূল শিক্ষা

ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা ইসলামী সমাজে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটি মাধ্যম। এই দিনটি উদযাপন করে মুসলমানরা তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের জীবনে তা প্রয়োগ করার চেষ্টা করে। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনের মূল শিক্ষা ছিল মানবিকতা, দানশীলতা, সমতা, এবং শান্তি।

এছাড়াও, নবীর (সা.) জীবনের বিভিন্ন দিক আমাদের সকলকে অনুপ্রাণিত করে এবং তাঁর শিক্ষাগুলো সব সময় প্রাসঙ্গিক। মুসলমানদের উচিত এই দিনটি শুধুমাত্র উৎসবের দিন হিসেবে নয়, বরং নিজের জীবনকে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দেখানো পথে পরিচালিত করার প্রতিজ্ঞা করার দিন হিসেবে উদযাপন করা।

Reference :

https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%88%E0%A6%A6%E0%A7%87_%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A8%E0%A6%AC%E0%A7%80


পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী কি?

ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী (আরবি: مَوْلِدُ النَبِيِّ মাওলিদু এন-নাবীয়ী, আরবি: مولد النبي মাওলিদ আন-নাবী, কখনো কখনো সহজভাবে বলা হয় مولد মাওলিদ, মেভলিদ, মেভলিট, মুলুদ আরো অসংখ্য উচ্চারণ; কখনো কখনো: ميلاد মিলাদ) হচ্ছে শেষ নবীর জন্মদিন হিসেবে মুসলমানদের মাঝে পালিত একটি উৎসব।

ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৪ কত তারিখে?

২০২৪ সালে ঈদে মিলাদুন্নবী পালিত হবে ১৬ সেপ্টেম্বর, সোমবার।

ঈদে মিলাদুন্নবীর দলিল কী?

ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করার সরাসরি দলিল কোরআন ও হাদিসে পাওয়া যায় না। তবে অনেক আলেম ও ইসলামী পণ্ডিতেরা মনে করেন যে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর প্রতি ভালবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে এটি পালন করা বৈধ।

ঈদে মিলাদুন্নবী সর্বপ্রথম কে কবে প্রবর্তন করেন?

ইতিহাসবেত্তাদের মতে, রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে মিশরের ফাতেমীয় শাসকগণ মিলাদুন্নবী উদযাপন করতেন এবং ঈদে মিলাদুন্নবীর প্রচলন শুরু হয় হিজরী ৪র্থ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url