টাইমড আউট কী? ক্রিকেটে টাইমড আউটের কারণ ও উদাহরণ
ক্রিকেটে টাইমড আউট (Timed Out) হল এমন একটি বিরল আউটের পদ্ধতি যা খুব কম ক্ষেত্রেই দেখা যায়। টাইমড আউট কি? এটি ক্রিকেটের আইন দ্বারা নির্ধারিত একটি আউটের ধরন, যেখানে নতুন ব্যাটসম্যান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মাঠে উপস্থিত হতে ব্যর্থ হলে তাকে আউট ঘোষণা করা হয়। ক্রিকেটের নিয়মাবলী অনুযায়ী, একজন ব্যাটসম্যানকে আউট হওয়ার পরে তিন মিনিটের মধ্যে নতুন ব্যাটসম্যানকে মাঠে পৌঁছাতে হয়। যদি তিনি এই সময়ের মধ্যে ক্রিজে উপস্থিত হতে না পারেন, তবে ফিল্ডিং দল আম্পায়ারের কাছে আবেদন করলে তাকে টাইমড আউট করা হয়।
এই আউটের ধরনটি ক্রিকেটের অন্যান্য আউটের পদ্ধতির তুলনায় অনেকটাই ভিন্ন এবং এর নজির খুবই বিরল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত মাত্র দুইবার এই আউট হয়েছে। তবে এই বিরল ঘটনাটি ক্রিকেটের নিয়মকানুন এবং খেলোয়াড়দের প্রস্তুতির গুরুত্বের উপর বিশেষ জোর দেয়। ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর আইসিসি বিশ্বকাপে (ভারত কর্তৃক আয়োজিত) বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কার ম্যাচে শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস টাইমড আউট হওয়ার কারণে ইতিহাসে প্রথমবার কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে টাইমড আউটের ঘটনা ঘটে।
টাইমড আউটের সংজ্ঞা
ক্রিকেটের আইন অনুযায়ী, টাইমড আউট হওয়ার ক্ষেত্রে নতুন ব্যাটসম্যানকে শেষ উইকেট পড়ার তিন মিনিটের মধ্যে ক্রিজে গিয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে অথবা তার সঙ্গী ব্যাটসম্যানকে পরবর্তী বলটি খেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। যদি কোনো কারণে এই সময়সীমা পূরণ না হয়, তবে আম্পায়ারের কাছে আবেদন করা হলে তাকে টাইমড আউট ঘোষণা করা হয়। ক্রিকেট টাইমড আউট এর ধারণা আসলে খেলোয়াড়দের দ্রুত প্রস্তুত হওয়ার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, যাতে খেলার মধ্যে কোনো বিলম্ব না ঘটে।
আইনের এই ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, "আগত ব্যাটসম্যান" এমন একজন ব্যাটসম্যান হতে পারেন, যিনি এখনও ব্যাটিং করেননি। ক্রিকেটের ক্ষেত্রে নির্ধারিত কোনো ব্যাটিং অর্ডার নেই, তাই দলের অধিনায়ক যাকে ইচ্ছা পরবর্তী ব্যাটসম্যান হিসেবে পাঠাতে পারেন। যদি কোনো ব্যাটসম্যান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্রিজে না পৌঁছান, তবে দলের অধিনায়ক সবচেয়ে খারাপ ব্যাটসম্যানকে সেই আউটের জন্য বলিদান করতে পারেন।
যদি দীর্ঘ সময় পরেও কোনো ব্যাটসম্যান ক্রিজে না আসেন, তবে আম্পায়াররা ধরে নেবেন যে ব্যাটিং দলটি খেলতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে এবং সেই ম্যাচটি প্রতিপক্ষ দলের হাতে পুরস্কার হিসাবে তুলে দেওয়া হবে। তবে যদি কোনো ব্যাটসম্যান আঘাতপ্রাপ্ত হন বা অসুস্থতার কারণে খেলতে না পারেন, তাহলে তাকে টাইমড আউট দেওয়া হয় না। এই ক্ষেত্রে ইনিংস বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং ওই খেলোয়াড়কে "অনুপস্থিত অসুস্থ/আহত" হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে টাইমড আউট
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে, যেখানে খেলা অনেক দ্রুত গতি সম্পন্ন, এখানে ক্রিকেটে টাইমড আউট কি সেটার কিছুটা ভিন্ন ধাঁচ রয়েছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানদের মাত্র ৯০ সেকেন্ডের মধ্যে মাঠে উপস্থিত হতে হয়। ফলে পরবর্তী ব্যাটসম্যান প্যাভিলিয়নে বসে না থেকে বাউন্ডারির কাছে অপেক্ষা করেন, যেন দ্রুততার সাথে মাঠে প্রবেশ করতে পারেন। ফুটবল এবং রাগবির মতো অন্যান্য কিছু দলগত খেলাতেও এই ধরনের দ্রুত পরিবর্তনের নজির দেখা যায়।
অস্বাভাবিক টাইমড আউটের ঘটনা
টাইমড আউট মানে কি? এই আউটের মূল উদ্দেশ্য হল খেলা চালিয়ে রাখা এবং কোনো ধরনের অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব এড়ানো। ক্রিকেটে টাইমড আউট হওয়া খুবই বিরল এবং এটি এড়ানো সহজ। তবে সময়ে সময়ে কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে যেখানে টাইমড আউটের প্রয়োগ হয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খুব কমই এই আউটের নজির দেখা গেছে।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে টাইমড আউটের নজির
প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে টাইমড আউটের কিছু নজির রয়েছে, যা অনেকটাই ব্যতিক্রমী ঘটনা হিসেবে দেখা হয়। যেমন:
- অ্যান্ড্রু জর্ডান (১৯৮৭-৮৮): ইস্টার্ন প্রভিন্স বনাম ট্রান্সভ্যাল ম্যাচে জর্ডান প্লাবিত রাস্তায় বাধা পেয়ে মাঠে দেরিতে পৌঁছেছিলেন।
- হেমুলাল যাদব (১৯৯৭-৯৮): ত্রিপুরা বনাম ওড়িশা ম্যাচে যাদব সীমানায় দলের ম্যানেজারের সাথে কথোপকথনে ব্যস্ত থাকায় ক্রিজে পৌঁছাতে ব্যর্থ হন।
- ভ্যাসবার্ট ড্রেকস (২০০২): বর্ডার বনাম ফ্রি স্টেট ম্যাচে ব্যাট করার সময় তিনি এখনো বিমানে ছিলেন, তাই মাঠে সময়মতো পৌঁছাতে পারেননি।
- এ জে হ্যারিস (২০০৩): নটিংহ্যামশায়ার বনাম ডরহাম ইউসিসি ম্যাচে শ্বাসকষ্টের কারণে হ্যারিস ক্রিজে যেতে সময় নিয়েছিলেন।
- রায়ান অস্টিন (২০১৩-১৪): ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান অস্টিন যথাসময়ে ক্রিজে পৌঁছাতে ব্যর্থ হন।
- চার্লস কুনজে (২০১৭-১৮): ম্যাটাবেল্যান্ড টাস্কার্স বনাম মাউন্টেনিয়ার্স ম্যাচে কুনজে যথাসময়ে ক্রিজে উপস্থিত হতে পারেননি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টাইমড আউটের ঘটনা
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টাইমড আউট হওয়ার ঘটনা খুবই বিরল। ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কার ম্যাচে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস টাইমড আউট হন এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবার কোনো ব্যাটসম্যান হিসেবে এই আউটের নজির স্থাপন করেন। ম্যাথিউসের হেলমেটে সমস্যা হওয়ায় তিনি ক্রিজে দেরিতে পৌঁছান, যার ফলে আম্পায়ারদের কাছে বাংলাদেশের অধিনায়ক আবেদন করেন এবং তাকে টাইমড আউট ঘোষণা করা হয়।
সময়ের গুরুত্ব ও খেলোয়াড়দের প্রস্তুতি
ক্রিকেট টাইমড আউট এর মাধ্যমে খেলার সময়ের গুরুত্ব আরও বেশি বোঝা যায়। এটি খেলোয়াড়দের প্রস্তুতির উপর একটি সতর্কতা স্বরূপ। সময়মতো মাঠে না পৌঁছালে দলের উপর কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, তার একটি উদাহরণ হল টাইমড আউট।
খেলোয়াড়দের জন্য এই নিয়মটি মনে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি এবং অন্যান্য দ্রুত গতি সম্পন্ন ফরম্যাটে। একটি দলের জন্য এমন ঘটনাগুলি হতে পারে অত্যন্ত বিপদজনক, কারণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যান যদি সময়মতো ক্রিজে না পৌঁছান, তবে তা দলের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
উপসংহার
টাইমড আউট ক্রিকেটে একটি বিরল কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ আউটের পদ্ধতি। এটি খেলোয়াড়দের সময়ানুবর্তিতা এবং খেলার গতি বজায় রাখার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়। ক্রিকেটের আইন অনুযায়ী, খেলোয়াড়দের অবশ্যই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মাঠে উপস্থিত হতে হবে, অন্যথায় তাদের টাইমড আউট করা হতে পারে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত মাত্র দুইবার টাইমড আউটের ঘটনা ঘটেছে, তবে এটি ক্রিকেটের একটি অন্যতম অনন্য এবং গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম হিসেবে বিবেচিত।
টাইমড আউট কি?
টাইমড আউট হল ক্রিকেটের একটি বিরল আউটের পদ্ধতি, যেখানে নতুন ব্যাটসম্যান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্রিজে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে তাকে আউট ঘোষণা করা হয়।
ক্রিকেটে কখন টাইমড আউট দেওয়া হয়?
যখন নতুন ব্যাটসম্যান আগের ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার তিন মিনিটের মধ্যে ক্রিজে উপস্থিত হতে ব্যর্থ হয়, তখন ফিল্ডিং দল আম্পায়ারের কাছে আবেদন করলে টাইমড আউট দেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টাইমড আউট কতবার ঘটেছে?
এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাত্র দুইবার টাইমড আউটের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস টাইমড আউট হন।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে টাইমড আউটের নিয়ম কি?
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানকে ৯০ সেকেন্ডের মধ্যে ক্রিজে পৌঁছাতে হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পৌঁছাতে না পারলে টাইমড আউট ঘোষণা করা হতে পারে।
টাইমড আউট কীভাবে এড়ানো যায়?
টাইমড আউট এড়ানোর জন্য, ব্যাটসম্যানকে আউট হওয়ার সাথে সাথেই প্রস্তুত থাকতে হবে এবং তিন মিনিটের মধ্যে ক্রিজে উপস্থিত হতে হবে।